আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেকারণেই একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক ভাবে সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবতা হলো, আমাদের সমাজে অধিকাংশ শিশু সঠিক উপায়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় না। শিশুদের সঙ্গে এমন অনেক আচরণ করা হয়, যা একদমই বেমানান। অনেক উচ্চশিক্ষিত মা-বাবাও তাদের শিশু সন্তানের সঙ্গে সঠিক আচরণ করেন না।শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আচার-আচরণে এড়িয়ে চলতে-
তোমার বয়সে আমি আরও দায়িত্বশীল ছিলাম
শৈশবে মা-বাবা নিজেরা কেমন ছিলেন তা শিশুসন্তানের সঙ্গে প্রায়ই তুলনা করে থাকেন। এইবিষয়টা মা-বাবার সবচেয়ে বড় ভুল।সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত প্রত্যাশা থেকেই এইধরনের আচরণ করেন মা-বাবা। এতে শিশুদের আত্ম বিশ্বাস নষ্ট হয়।
সবসময় তুমি ভুল সিদ্ধান্ত নাও
সন্তান কোনো ভুল করলে মা-বাবা প্রায়ই বকা ঝকা করেন। বড়-ছোট সবারই কম-বেশি ভুল হতে পারে। ভুল থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। ভুল না করলে শেখাও যায় না। আপনার সন্তান হয়তো পড়াশুনা করছে না, সে যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে তা আপনার পছন্দ হচ্ছে না। এসব কারণে অভিভাবক হিসেবে আপনি তাকে বকা দিতে পারেন না। সন্তানের প্রতি আপনার দায়িত্ব হচ্ছে পথ প্রদর্শকের মতো। আপনার মতামত মেনে নিতে বাধ্য করবেন না।
অন্য ভাই-বোনদের মতো হতে পারো না
অন্যের সঙ্গে অযৌক্তিক তুলনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা প্রকৃতি সবাইকে এক রকম সৃষ্টিশীল আচরণ বোধ দিয়ে সৃষ্টি করেন নাই। শিশুদের সামর্থ্যের দিকে আঙ্গুল তুলে তাদের মনে বিদ্বেষের বীজ বপন করবেন না। এই ধরনের আচরণে ভাই-বোনের সম্পর্কে চিড় ধরে। নিশ্চয়ই চাইবেন না, আপনাদের প্রতি সন্তানের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হোক।
একা থাকতে দাও
বিষণ্নতা, ক্লান্তি বা অন্য কারণে আপনি হয়তো মাঝেমাঝে একা থাকতে চান।আপনার মনের অবস্থা শিশু সন্তানটি বুঝতে পারবে এমননাও হতে পারে। তখন তাকে ধমকের সুরে না বলে বুঝিয়ে বলুন। যদি তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলেন তাহলে সে নিজেকে অবহেলিত, অপ্রত্যাশিত মনে করবে। বিষণ্নতা আচ্ছণ্ন করবে তার শিশু মনে।তাই ধৈর্য ধারণ করে তাকে সুন্দর ভাবে বলুন।
তোমার লজ্জিত হওয়া উচিত
এই ধরনের বাক্যের ব্যবহার যেকোনো শিশুর ক্ষেত্রে ভীতি জনক। শিশুরা অনেক সময় দুষ্টু বা বেপরোয়া আচরণ করতে পারে।তার জন্য তাকে ভৎর্সনা করা উচিত নয়। ভালো-মন্দের প্রার্থক্য বুঝানোর জন্য আনো অনেকভালো এবং সুন্দর উপায় আছে।
একদম বাবা/মার মতো হয়েছ
দাম্পত্য সম্পর্কে তিক্ত-মধুরতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।তবে কিছু কিছু দম্পতিদের ক্ষেত্রে তিক্ততা চরম আকার ধারণ করে বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটে। দম্পতিদের পারস্পারিক ঝগড়ার সাক্ষী হয়ে থাকে শিশুরা। অনেকেই শিশুদের ওপর তাদের রাগ ঝাড়তে দেখা যায়। এরকম আচরণ করবেন না, এতে শিশুর শ্রদ্ধা বোধ হারিয়ে যাবে।
তুমি সবসময়ই কষ্ট দাও
মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক শিশুই তাদের আঘাত দেয়। তবে এইধরনের আঘাত বেশির ভাগই অনিচ্ছাকৃত।আপনার এই ধরনের কথাবার্তা সন্তানের মনে অপরাধবোধ তৈরি করে। আপনাকে খুশি করার জন্য হয় তো শিশুটি আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিবে।কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আপনি তার কাছ থেকে সুখের অধিকার ছিনিয়ে নিলেন। শিশুদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিন এবং অপরাধবোধ মুক্ত জীবনযাপনে সহায়তা করুন।
খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ছাড়ো
বড়রা যেমন বন্ধুনির্বাচনের ক্ষেত্রে এতচিন্তা করে না, ছোটরাও তেমনি। শুধু প্রার্থক্য এটাই, আমরা বড়রা জানি খারাপ বন্ধুদের কাছ থেকে কীভাবে দূরে থাকতে হয় আর শিশুরা সেটা জানে না। শিশুদের কাছে বন্ধুই সব। আপনি তাকে ‘ভালবন্ধু’ খোঁজার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন না। তাকে চোখে চোখে রাখতে পারেন। তার অজান্তে চলার গতির দিকে নজর রাখতে পারেন।
অনলাইন ডেস্ক ০৯ এপ্রিল, ২০১৬ ইং ১০:১৮ মিঃ